Correct pronunciation of 'এ' in Bengali

বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত অষ্টম স্বরবর্ণ । উচ্চারণ স্থান কণ্ঠতালু । উচ্চারণের সময় মুখের প্রান্ত বাইরের দিকে প্রসারিত হয় । ব্যঞ্জনসন্ধির সময় 'ে' এই চিহ্ন ব্যবহৃত হয় ।

বাংলা ভাষায় 'এ' এই স্বরবর্ণের দুটি উচ্চারণ । স্বাভাবিক 'এ' এবং বিকৃত 'অ্যা' । যেমন – এবার (এ-বার্‌) এবং এখন (অ্যাখোন্‌) । লক্ষণীয়, 'অ্যা' উচ্চারণের নির্দেশিকা হিসাবে 'এ' –কারে মাত্রা দিয়ে লেখার রীতিও আছে ।

কেবলমাত্র এই ধ্বনি দিয়ে সর্ব্বনামের প্রয়োগ আছে, যার অর্থ 'এই' । এছাড়াও সম্বোধন, উষ্মা, খেদ, অবজ্ঞা, পাদপূরণ ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই ধ্বনি ব্যবহৃত হয়ে থাকে । সে ক্ষেত্রে উচ্চারণে পরিবর্তন হয় না । একই নিয়ম 'কে', 'যে', 'সে' ইত্যাদি এক অক্ষরের শব্দে প্রযুক্ত হবে ।

বাগার্থবৈচিত্রের জন্য একই শব্দের রূপ ভিন্ন হতে পারে । শব্দে মধুরতা, কার্কশ্য, তাচ্ছিল্য, স্নেহ অথবা ব্যঙ্গের ভাব প্রকাশের প্রয়োজনে শব্দের বিচিত্র উচ্চারণ লক্ষ্য করা যায় । বহুক্ষেত্রে শব্দ আঞ্চলিকতার দোষে দুষ্ট হয় ।

যেমন –

লেজ, ল্যাজ, ল্যাজা, ন্যাজ

গাঁজা, গ্যাঁজা

ছেলে, স্যালে, সাউলা, সাওয়াল

'এ' ধ্বনি 'এই' শব্দের সংক্ষিপ্ত রূপ । যার অর্থ 'বর্তমান' । কোন শব্দের পূর্বে থাকলে তা বিষয়ের বর্তমান অবস্থা নির্দেশ করে । সেক্ষেত্রে 'এ' বা 'এ' –কার বিকৃত হয় না ।

যেমন –

এই কাজ > একাজ

এই খান > এখান

এই দিক > এদিক

এই পাড়া > এপাড়া

এই বার > এবার

এই ক্ষণ > এক্ষুনি

এই ক্ষণ > এখন (অ্যাখোন্‌), দ্বিতীয় বর্ণে নিহিত 'অ' পরিবর্তিত হয়ে সংবৃত বা 'ও' হয়ে গিয়েছে । তাই প্রথম ধ্বনিও বিকৃত হয়ে 'অ্যা' উচ্চারিত হবে ।

১. শব্দের আদি বা শুরুতে 'এ' বা 'এ' –কার –

১.১. দ্বিতীয় ব্যঞ্জনবর্ণে নিহিত 'অ'–কার সংবৃত বা 'ও' উচ্চারিত হলে প্রথম ধ্বনি 'এ' বা 'এ' –কার বিকৃত হয়ে 'অ্যা' উচ্চারিত হয় ।

যেমন -

এখন (অ্যাখোন্‌), একতা (অ্যাকোতা), এত (অ্যাতো), কেন (ক্যানো), কেমন (ক্যামোন্‌), গেল (গ্যালো), দেখন (দ্যাখোন্‌), বেসন (ব্যাশোন্‌), হেন (হ্যানো), যেমন (য্যামোন্‌)

ব্যতিক্রম –

কেন্দ্র (কেন্‌দ্‌রো), কেবল (কেবোল্‌)

কিন্তু দ্বিতীয় বর্ণে 'হ' কিংবা 'য়' থাকলে প্রথম ধ্বনি 'এ' বা 'এ' –কার অপরিবর্তিত থাকে ।

যেমন –

গেহ (গেহো), জ্ঞেয় (গেঁয়ো), দেয় (দেয়ো), দেহ (দেহো), পেয় (পেয়ো), লেহ্য (লেজ্‌ঝো), দেয়াল, শেয়াল

১.২. দ্বিতীয় ব্যঞ্জনবর্ণে নিহিত 'অ'–কার বিবৃত বা 'অ' উচ্চারিত হলে প্রথম ধ্বনি 'এ' বা 'এ' –কারের উচ্চারণ পরিবর্তন হয় না ।

যেমন -

একক, এসব, কেশব, ছেদন, পেলব, লেখন, শেখর, সেবক

১.৩. দ্বিতীয় ব্যঞ্জনবর্ণে 'আ' –কার থাকলে 'এ' বা 'এ' –কারের উচ্চারণ পরিবর্তন হয় এবং 'অ্যা' উচ্চারিত হয় ।

যেমন -

একা, এগারো, একান্ন, একষট্টি, একাত্তর, একাশি, একানব্বই, এলাচ, কেরাণী, ক্ষেপা, খেলা, ঘেঁষা, চেলা, টেরা, দেখা, বেলা, বেড়া, ভেড়া, ভেলা, মেলা, হেলা

ব্যতিক্রম –

গেলাম, গেলাস, চেয়ার, চেরা, ছেঁড়া, দেদার, নেতা, নেপাল, বেড়াল, পেশা, মেশা, লেখা

১.৪. দ্বিতীয় ব্যঞ্জনবর্ণে 'ই' / 'ঈ' / 'উ' / 'ঊ' / 'ঋ' / 'এ' / 'ও' –কার থাকলে 'এ' –এর উচ্চারণ পরিবর্তন হয় না ।

যেমন -

এই, সেই, এক্ষুনি, এদিন, এদিক, একুশ, এলুম, এলেম, এসো, কেয়ূর, কেলো, গেঁয়ো, ছেলে, টেবিল, দেখি, দেখে, ভেলি, ভেল্কি, ভেবে, ভেবো, ভেউ, মেদুর, মেয়ে, মেলি, রেখে

১.৫. তৎসম শব্দে 'এ' কারের উচ্চারণ সাধারণতঃ বিকৃত হয় না ।

যেমন –

এষা, কেতন, কেদার, কেশব, চেতনা, তেজ, দেবতা, প্রেম, মেনকা, বেদ, মেধা, রেবতী, রেবা, শেখর, সেবক, হেমন্ত

'পেচক' তৎসম শব্দ, তাই তার উচ্চারণে বিকৃতি নেই । কিন্তু 'পেঁচা' (প্যাঁচা), শেষে 'আ' –কার থাকার কারণে প্রথম ধ্বনি বিকৃত হয়েছে । আবার 'পেঁচি', শেষে 'ই' –কার থাকার কারণে প্রথম ধ্বনি অবিকৃত রয়েছে ।

২. শব্দের দ্বিতীয় বা মধ্যবর্তী বর্ণে 'এ' বা 'এ' –কার –

২.১. শব্দের দ্বিতীয় বা মধ্যবর্তী বর্ণে 'এ' বা 'এ' –কার সাধারণ ভাবে অবিকৃত বা 'এ' উচ্চারিত হবে ।

যেমন –

করেন, চলেন, বলেন, মনের, সতেরো

২.২. উপসর্গযুক্ত, সন্ধিবদ্ধ বা সমাসবদ্ধ শব্দের ক্ষেত্রে মূল শব্দের উচ্চারণ অনুসৃত হবে ।

যেমন –

অনেক, অশেষ, আনন্দমেলা (আনোন্‌দোম্যালা), অনুমেয়, এবেলা (এব্যালা), দেবেন্দ্র (দেবেন্‌দ্‌রো), নরেন, নিকেশ, নিঃশেষ, বারবেলা (বার্‌ব্যালা), বামাক্ষেপা (বামাখ্যাপা), বিশেষ, ভবেশ, পাকাদেখা (পাকাদ্যাখা), যতেক

৩. শব্দের শেষে 'এ' বা 'এ' –কার –

শব্দের শেষে 'এ' বা 'এ' –কার থাকলে তা অবিকৃত বা 'এ' উচ্চারত হবে ।

যেমন –

বিছে, বিয়ে, মিথ্যে

শব্দের শেষে '-এ', '-য়ে', '-তে', '-এতে', '-এর' ইত্যাদি বিভক্তি যুক্ত হতে পারে । সে ক্ষেত্রেও উচ্চারণ অবিকৃত থাকে ।

যেমন –

করে, কাজে, জলে, নামে, বইয়ে, নদীতে, বাড়িতে, রুচিতে, ছেলেতে, বিয়েতে, রামের, কিসের, বাইরের, সকলের

প্রকৃতপক্ষে আঞ্চলিকতা বা তাচ্ছিল্যের প্রকাশ ছাড়া শব্দের অন্তস্থিত 'এ' বা 'এ' –কারের বিকৃতি পরিত্যাজ্য ।